Text

জলবায়ু সংকট সম্পর্কিত চর্চা অনুবাদের ধারণার উপর অবিচ্ছেদ্যভাবে নির্ভরশীল। এই শব্দটি প্রাসঙ্গিক সাহিত্যে স্বতন্ত্র, কিন্তু আন্তঃসম্পর্কে, সব আলোচনার সাথে জড়িয়ে আছে। প্রথমটি, ‘জ্ঞান অনুবাদ’ শব্দবন্ধে প্রতিফলিত হয়। এই শব্দবন্ধটি স্টেকহোল্ডার (stakeholders) এবং সাধারণ জনগণের কাছে গবেষণার ফলাফলের প্রচারকে বোঝায়। অনুবাদের দ্বিতীয় সম্পর্কটি শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে প্রচার করার পরিবর্তে তা কার্যকরী করার সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এই দুটি আন্তঃসম্পর্ক জলবায়ু সংকট অনুবাদের ক্ষেত্রে বেশি চর্চিত। পরিশেষে, জলবায়ু সংকট চর্চায় অনুবাদের আরও পরিচিত, তবে কম স্বীকৃত, প্রবণতা হলো গবেষণা পত্রগুলি অনুবাদ করা, শিশুদের সাহিত্যে পরিবেশ - উদ্বেগকে সম্বোধন করা এবং অন্যান্য লিখিত উপাদানগুলি বিভিন্ন ভাষায় উপস্থাপন করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনীর আলোচনাসমূহের ধারাবিবরণী (interpretation) পেশ/ব্যখ্যা করা।

জ্ঞান অনুবাদের ক্ষেত্রে, সাধারণ মানুষের কাছে জলবায়ু বিজ্ঞানের খবরগুলি সহজে প্রচার করার জন্য জলবায়ু সংকটের প্রভাবগুলি দৈনন্দিন ভাষায় ‘অনুবাদ’ করার উপর জোর দেওয়া হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে জ্ঞান অনুবাদ অনেকের (many agents) সম্মিলিত প্রচেষ্টা বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন, “বেঞ্চ থেকে বেডসাইডে (from bench to bedside) জ্ঞান অনুবাদ করা, বা মৌলিক গবেষণা থেকে ব্যবহারিক (clinical) অনুশীলনে জ্ঞান অনুবাদ” (Ødemark et al, 2021, p. 153,) করা। জলবায়ু সংকট আলোচনায় শব্দটির ব্যবহার বিক্ষিপ্ত এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের তুলনায় কম ব্যবহৃত, তবে আশা করা যায় অনুবাদের প্রবাহ একইভাবে একমুখী। জলবায়ু বিজ্ঞানীদের পাওয়া তথ্য এবং অনুসন্ধানগুলি বিভিন্ন স্তরের ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিস্তৃতভাবে প্রচারিত হওয়া উচিত। এই প্রক্রিয়াটি কার্যকরী করার জন্য প্রতিটি অনুষ্ঠানের শ্রোতৃমন্ডলীকে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে নির্বাচন করা দরকার। যদিও এই ধরণের পদক্ষেপ এখনও অবধি খুবই কম গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহত্তর বৃত্তের কাছে পৌছানোর জন্য জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষণা সমাজের বিভিন্ন স্তরের জন-সাধারনের জন্য অনুবাদ করা অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ। কিন্তু একই সাথে, এই অনুবাদগুলি বৈজ্ঞানিক তথ্যের সম্প্রসারণের থেকে নৃতাত্ত্বিক তথ্যগুলির মানবিক মূল্যবোধের ওপর বেশী জোর দেয়।

এই ধরনের জ্ঞান স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও, বিজ্ঞানী এবং নীতি নির্ধারকরা ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকার করছেন যে তাঁদেরও স্থানীয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা শুনতে হবে এবং তা থেকে শিখতে হবে। বিশ্ব উষ্ণায়নের গতি, যা জলবায়ু সংকটের জন্য সবচেয়ে দায়ী, তা ধীরে করার, থামানোর বা বিপরীত করার জন্য যে সার্বিক পদক্ষেপগুলি নেওয়া দরকার, তা বিশ্বজুড়ে অভিন্ন হবে বলেই আশা করা যায়; যেমন, জীবাশ্ম জ্বালানীর ওপর নির্ভরতা শেষ / কম করা, দৈনিক খাদ্যাভাসের ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকা থেকে মাংস এবং দুধ বাদ দেওয়া, এবং পরিবর্ত হিসেবে পাবলিক পরিবহণের মাধ্যমগুলি ব্যবহার করা। এ সব সত্ত্বেও জলবায়ু সংকটের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবহারিক জ্ঞান সবচেয়ে গুরুত্ব পায় – তা সে বন্যা, খরা, দাবানল, তাপপ্রবাহ বা বরফঝড়ের ব্যাপারই হোক বা সেই সব দূর্যোগ মোকাবিলা সংক্রান্ত ব্যবস্থাজনিত চেতনাই হোক। বৈশ্বিক পরিবেশগত তথ্যের একই পরিসংখ্যান বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জিনিষ বোঝায়, অর্থাৎ ভূতাত্ত্বিক এবং সমাজতাত্ত্বিক বৈষম্য অনুসারে পরিসংখ্যানগুলির ব্যাখ্যা আলাদা আলাদাভাবে হওয়া উচিত। এই কারণেই বৈজ্ঞানিক তথ্যের অনুবাদ সবসময়েই উদ্দিষ্ট পাঠকের/শ্রোতার সময় এবং স্থানের প্রাসঙ্গিকতার ওপর নির্ভর করা উচিত।

জলবায়ু সংকট চর্চায় অনুবাদের রূপক ব্যবহার সাধারণত জ্ঞান অনুবাদকে ঘিরে আবর্তিত। এই ক্ষেত্রে অনুবাদ চর্চা মূলত: বিমূর্ত তথ্যের বাস্তব এবং কার্যকর অনুবাদ প্রক্রিয়ার ওপরই নিবদ্ধ । তবে এই ক্ষেত্রে অনুবাদকে তত্ (বা ক্রিয়া, পরিকল্পনা, প্রমাণ, আইন, অনুভূতি)কার্যকরী করা, প্রকল্পায়ণ করা, বা ব্যবহারিক পরিবর্তন আনার মাধ্যম হিসাবে পরিগণিত করা হয়। এখানে, জ্ঞান উৎপাদক এবং জ্ঞান ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটি সেতুর পরিবর্তে, অনুবাদকে এক ধরণের রসায়ণ বা অণুঘটক হিসাবে দেখা হয় – এমন একটি প্রক্রিয়া যা বিমূর্ত, বিশ্লেষণাত্মক এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে মূর্ত, ব্যবহারিক এবং সামাজিক-রাজনৈতিক তথ্যে পরিণত করে কাঙ্খিত পরিবর্তনকে গতিশীল করে। বর্ণনাকারীর দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে, এই ধরণের অনুবাদ সরকার, জনসাধারণ, রাজনীতিবিদ, নীতি নির্ধারক, বা বিজ্ঞানীদের কাজ হিসাবে দেখা হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে, এই ধরণের কাজে অনুবাদকের ভূমিকা সবসময়েই অন্য কারও ওপর বর্তায় এবং সেহেতু আসল অনুবাদকের চিহ্নিতীকরণ কখনোই সম্ভবপর হয় না। গবেষক এবং এ্যক্টেভিস্টদের মধ্যে এই ব্যপারে ব্যাপক ঐকমত্য রয়েছে যে এই ধরণের অনুবাদকে অদূরদর্শী সরকারী নীতি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত উদাসীনতা পর্যন্ত নানারকম সংপ্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং তার বাস্তবীকরণ, অত্যাধুনিক গবেষণা এবং তার আইনীকরণ, সরকারী নীতি এবং ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার পছন্দ – এই সবকিছুর প্রায়োগিকীকরণের মধ্যে যে ব্যাপক ব্যবধানটি অনুভূত হয় তার মূলে রয়েছে প্রকৃতি এবং সমাজের মধ্যেকার ব্যপক ব্যবধান। যদি প্রকৃতি এবং সমাজকে দুটি ভিন্ন সত্তা হিসাবে দেখা হয়, তবে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ভূমিকা “সমাজে প্রকৃতি সম্পর্কে তথ্যগুলি অনুবাদ করার” মধ্যে সীমিত হয়ে যায়। এই বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞকে “প্রকৃতির পক্ষে এক ধারাভাষ্যকার” হিসাবে দেখা যেতে পারে (Naustdalslid, 2011, p 245), যাঁকে সমাজের করা প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ এবং বৈজ্ঞানিক সমাধান প্রদানের মাধ্যমে এই ক্ষতি হ্রাস করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু সংকটের এই পদ্ধতির সমালোচনা করে নস্টডালস্লিড যথার্থ যুক্তি দিয়েছেন যে “প্রকৃতি ও সমাজকে শুধুমাত্র পরস্পর নির্ভরশীল হিসেবে দেখলে চলবে না, বরং দুটি আন্তঃসংযুক্ত ব্যবস্থা হিসাবেও দেখতে হবে যেখানে তাদের মধ্যে সীমানা ক্রমশঃ অস্পষ্টতর হয়ে উঠছে” (2011, p 246)।

আন্তঃভাষিক অনুবাদ নিঃসন্দেহে জলবায়ু সংকট সংক্রান্ত আলোচনার নির্মাণ, ও বিস্তার, উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জলবায়ু সংকট সংক্রান্ত কর্মসূচী অন্তর্ভুক্তি এবং তথ্যের বিশ্বব্যাপী প্রচারের ওপর জোর দেয় বলে এই ভূমিকাটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। সমস্ত বিশ্বের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি কীভাবে জলবায়ু সংক্রান্ত জরুরি অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছেন বা তাঁরা কীভাবে এই বিতর্কে অবদান রাখতে পারেন তার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। তবে, ধারাভাষ্যের খুব কম বা আদৌ কোনও ব্যবস্থা না থাকায়, জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনগুলিতে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা প্রায়শই বিতর্কগুলিতে অবদান রাখতে বা বিতর্কগুলি বুঝতে অসুবিধার সম্মুখীন হন। এইজাতীয় আলোচনাগুলি শুধুমাত্র যে জটিল আইনী এবং বৈজ্ঞানিক ভাষায় হয় তা নয়, এই আলোচনাগুলি তাঁদের তৃতীয় বা চতুর্থ ভাষায় অনুসরণ করতে হয়। এবং এটি নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ। আমার সুচিন্তিত বক্তব্য এই যে স্থানীয় সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির তাৎপর্য, এই জাতীয় পর্যালোচনাগুলির ভাষা দ্বারা প্রতিফলিত হওয়া এবং আকৃতি পাওয়ার দৃষ্টিভঙ্গির বিচার, এবং জলবায়ু সংকট চর্চার আন্তঃভাষিক অনুবাদের প্রভাবগুলির বিবেচনা, জ্ঞান অনুবাদের মূলধারার প্রত্যাশার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকৃষর্ণ করে জলবায়ু বিজ্ঞানীদের তাঁদের অনুসন্ধানগুলিকে আরও কার্যকরী করার উপায়গুলি সনাক্ত করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।

Bibliography

Naustdalslid, J. (2011). Climate change—The challenge of translating scientific knowledge into action. International Journal of Sustainable Development & World Ecology,18(3), 243–252. https://doi.org/10.1080/13504509.2011.572303

Ødemark, J., Fraas Henrichsen, G., & Engebretsen, E. (2021). Knowledge translation. In S. Susam-Saraeva, & E. Spišiaková (Eds.), The Routledge handbook of translation and health (149–161). Routledge.

Cite this article

Electronic reference

Şebnem Susam-Saraeva and Sriparna Das, « Synopsis: অনুবাদ ও জলবায়ু সংকট: স্থানীয় উপস্থিতি ও সার্বভৌম জরুরি পরিস্থিতি », Encounters in translation [Online], 2 | 2024, Online since 28 novembre 2024, connection on 27 juillet 2025. URL : https://publications-prairial.fr/encounters-in-translation/index.php?id=730

Authors

Şebnem Susam-Saraeva

এডিনবব়া বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ড, ইউ.কে.

Author resources in other databases

  • IDREF
  • ORCID
  • ISNI
  • BNF

By this author

Sriparna Das

হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দ্রাবাদ, ভারত

Copyright

CC BY-SA 4.0